জান্নাতের নদীর নাম

 জান্নাতের নদীর নাম

জান্নাতের নদীর নাম
 জান্নাতের নদীর নাম


 জান্নাতের নদীর নাম, জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত হবে।

১. পানি ২. দু্ধ  ৩. মধু  ৪. শরাব 


তন্মধ্যে পানি,তার ঝর্ণাসমূহ হচ্ছে:

১. কাফুর নামক ঝর্ণা। এর পানি সুঘ্রাণ এবং সুশীতল।

২. সালসাবিল ঝর্ণা। এর পানি ফুটন্ত চা ও কপির ন্যায় সুগন্ধি ও উত্তপ্ত থাকবে।

৩. তাছনীম নাম ঝর্ণা। এর পানি থাকবে নাতিশীতোষ্ণ।


আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]

আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (আল বাকারা:২৫)


আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন:

﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥] 

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল। (মুহাম্মদ:১৫)


আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে। (আদ দুখান:৫১-৫২)


আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]

উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ। (আর রাহমান:৫০)


আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেন:

﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]

উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ। (আর রাহমান:২২)


সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦] 

অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে। (এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।(সূরা যারিয়াত: ১৫-১৬)

কোরআন থেকে ছেলেদের নাম

বাগানসমূহের নিচ দিয়ে প্রবাহের অর্থ হচ্ছে, বাগানসমূহের পাশ দিয়ে নদী নালা প্রবাহমান থাকবে। কেননা- বাগ-বাগিচা যদিও নদীর কিনারে হয় তবু তা নদী থেকে একটু উচু জায়গাই হয়ে থাকে এবং নদী ও বাগান থেকে সামান্য নিচু নিয়েই প্রবাহিত হয়।


পক্ষান্তরে যে সমস্ত জায়গায় ঝর্ণার কথা বলা হয়েছে সেখানে বাগান এবং ঝর্ণা একত্রে থাকবে একথাই বলা হয়েছে। আমরা জানি বাগানের মধ্যে বা একই সমতলে ঝর্ণা থাকা সম্ভব। শুধু সম্ভবই নয় বাগানের শোভা বর্ধনের একটি অন্যতম উৎসও বটে। তাই কুরআনের ভাষায় হচ্ছে:

﴿ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥٢] 

সেদিন তারা বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান করবে।

আরো বলা হয়েছে:

﴿ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ ﴾ [الانسان: ١٤] 

জান্নাতের ছায়া তাদের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং তার ফলসমূহ সর্বদা আয়ত্বের মধ্যে থাকবে। (সূরা দাহর: ১৪)

একই জায়গায় নানা ধরনের ফুল ফলের বাগান, বড় বড় ছায়াদার বৃক্ষরাজি, ঝর্ণাসমূহ, সাথে বিশাল আয়তনের অট্টালিকাসমূহ,পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদী,একত্রে এগুলোর সমাবেশ ঘটলে পরিবেশ কত মোহিনী মনোমুগ্ধকার হতে পারে তা লিখে বা বর্ণনা করে বুঝানো কোনক্রমেই সম্ভব নয় শুধুমাত্র মনের চোখে কল্পনার ছবি দেখলে কিছুমাত্র অনুমান করা সম্ভব।

মু‘আবিয়া রাযি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .

নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে। [তিরিমিযী, ২৫৭১]


জান্নাতের নদীসমূহের পানির রং ও স্বাদ সর্বদা একই রকমের থাকবে।

আবু হুরাইরাহ রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "সাইহান, জাইহান, ফোরাত ও নীল জান্নাতের নদী। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল জান্নাত)[৩১]


হাকীম বিন মোয়াবিয়া তার পিতা থেকে তিনি নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জান্নাতে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর ও শরাবের সাগর রয়েছে। এগুলো থেকে পরে আরো নহরের শাখা-প্রশাখা বের হবে। (তিরমিজী)[৩২]


আবু সাঈদ খুদরী রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ্‌ স্বীয় দয়ায় যাকে খুশি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। (অতঃপর দীর্ঘদিন পর বলবেন) দেখ যে ব্যক্তির অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের কর। 


তখন তারা এমন অবস্থায় বের হবে যে তাদের শরীর কয়লার ন্যায় জ্বলে গেছে। তখন তাদেরকে হায়াত বা হায়া নামক নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা এমনভাবে সজীব হয়ে উঠবে, যেমন বন্যার আবর্জনার মাঝে চারাগাছ সজীব হয়ে উঠে। তোমরা কি কখনো দেখনি যে কেমন হলুদ রং বিশিষ্ট হয়ে ওঠে। (সহীহ মুসলিম কিতাবুল ঈমান)[৩৩]


কাওসার নদী

আনাস ইবনু মালিক রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু সূত্রে নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক নহরের কাছে এলে দেখি যে তার দু'ধারে ফাঁপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিব্‌রীল! এটা কী? তিনি বললেন, এটা ঐ কাউসার যা আপনার প্রতিপালক আপনাকে দান করেছেন। তার ঘ্রাণে অথবা মাটিতে ছিল উত্তম মানের মিশ্‌ক এর সুগন্ধি" (সহীহ বুখারী,হাদীস সংখ্যা-৬৫৮১)[৩৪]


আবদুল্লাহ বিন ওমর রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কাওসার জান্নাতের একটি নদী। যার উভয় তীর স্বর্ণ নির্মিত। তার পানি ইয়াকুত ও মোতির উপর প্রবাহমান। তার মাটি মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধময়। তার পানি মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি এবং বরফের চেয়ে অধিক সাদা" (তিরমিজী)[৩৫]


আনাস বিন মালেক রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,কাওছার কি? তিনি বললেন, এটি একটি নদী, যা আল্লাহ্‌ তা'য়ালা আমাকে জান্নাতে দান করবেন। তা দুধ অপেক্ষা সাদা এবং মধু থেকেও সুমিষ্ট। এর মাঝে রয়েছে বহু পাখি। এগুলোর গর্দান হবে উটের গর্দানের মত" উমর রাযি আল্লাহু তা'য়ালা আনহু বললেন, এগুলো তো খুব মোটা-তাজা হবে" রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এগুলোর আহারকারী আরো সুখী হবে" (তিরমিজী কিতাবুল জান্নাহ)[৩৬]


জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্‌ তা'য়ালা বলেন,

তাদের সামনে ঘুরে ঘুরে রুপার পাত্র পরিবেশন করা হবে আর সাদা পাথরের পানপাত্র। সেই সাদা পাথরও হবে রুপার তৈরি। তারা এগুলোকে যথাযথ পরিমাণে ভর্তি করবে। তাদেরকে পান করানোর জন্য এমন পাত্র পরিবেশন করা হবে যাতে আদার মিশ্রণ থাকবে। সেখানে আছে একটা ঝর্ণা, যার নাম সালসাবীল। (সূরাহ আদ্‌-দাহ্‌রঃ ১৫-১৮)[২০]


মহান আল্লাহ্‌ বলেন,

(অপরদিকে) নেক্‌কার লোকেরা এমন পানপাত্র থেকে পান করবে যাতে কর্পুরের সংমিশ্রণ থাকবে। আল্লাহ্‌র বান্দারা একটি ঝর্ণা থেকে পান করবে। তারা এই ঝর্ণাকে (তাদের) ইচ্ছেমত প্রবাহিত করবে। (সূরাহ আদ্‌-দাহ্‌রঃ ৫-৬)[২০]


আল্লাহ্‌ তা'য়ালা বলেন,

তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রিয্‌ক- ফলমূল; আরা তারা হবে সম্মানিত। (তারা থাকবে) নিয়ামাতের ভরা জান্নাতে উচ্চাসনে মুখোমুখী হয়ে তাদের কাছে চক্রাকারে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ প্রবাহিত ঝর্ণার সুরাপূর্ণ পাত্র। নির্মল পানীয়,পানকারীদের জন্য সুপেয়,সুস্বাদু। নেই তাতে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু, আরা তারা তাতে মাতালও হবে না। (সূরাহ আস্‌-সা-ফ্‌ফাতঃ ৪১-৪৭)[২০]


আল্লাহর নবী (সাঃ) কে মিরাজে অনেক নিদর্শণ দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলঃ "সিরাতুম মুনতাহা" এটি মূলত একটি গাছ। যার রং এর বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। কারণ রংধনুর রং এর সাথে তা মিলবে না। তাতে আছে শত শত সোনালি রংঙ্গের প্রজাপতি।  আল্লামা নববী (রহ,) বলেছেন, এর মধ্যে চারটি নদী আছে, দুটি দুনিয়াতে এবং দুটি জান্নাতে প্রবাহিত হয়।  দুনিয়ার দুটি হল, নীলনদ আর উইফ্রেটিস বা ফোরাত নদী(কেমন করে প্রবাহিত-তা আমাদের জ্ঞানের উর্ধ্বে) আর জান্নাতের দুটি- হাউজে কাওছার ও সানসাবিল। 


সিদরাতুল মুনতাহা এর কিছু উপরে আল্লাহর আরশ সমাসীন। কিন্তু আল্লাহর কোনো সৃষ্টি সিদরাতুল মুনতাহা অতিক্রম করে সিদরাতুল মুনতাহা এর কিছু উপরে আল্লাহর আরশ সমাসীন। কিন্তু আল্লাহর কোনো সৃষ্টি সিদরাতুল মুনতাহা অতিক্রম করে নি।


ইবনে মাসঊদ  (রাঃ) বলেছেনঃ পৃথিবী থেকে যা কিছু পাঠানো হয়, তা সিদরাতুল মুনতাহায় এসে থেমে যায়। আর আল্লাহ কোন কিছু পৃথিবীতে প্রেরণ করলে তাও সিদরাতুল মুনতাহা থেকে প্রেরণ করেন।


কেবল মিরাজে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তা অতিক্রম করে আল্লাহর অতি নিকটে চলে গেছেন এবং বসে তাঁর সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি আল্লাহকে দেখেন নি, তাঁর হিজাব বা পর্দা দেখেছেন। আল্লাহকে কেবল জান্নাতেই দেখা যাবে।


জান্নাতের ফলের নাম

সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতের নাম কি

৮টি জান্নাতের নাম কি কি

ফোরাত নদীর বর্তমান অবস্থা

Post a Comment

Previous Post Next Post